Malana : Untouchable villages of India : হিমাচল প্রদেশের কুল্লু জেলার একটি প্রাচীন গ্রাম হল মালানা। কুল্লু জেলার পার্বত্য উপত্যকার একটি নির্জন অবস্থিত এই গ্রামটি। এই গ্রামটি সমুদ্র থেকে প্রায় ৯,৯৩৮ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। হিমাচল প্রদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং প্রাচীন ইতিহাসের সমৃদ্ধ এই গ্রাম হল মালানা (Malana).
Malana : পৌরাণিক ঐতিহ্য
সম্রাট আলেকজান্ডার যখন ভারত বর্ষ আক্রমণ করেছিল তখন তার বেশ কিছু সৈন্য হিমালয়ের এই সৌন্দর্য মুগ্ধ হয়ে এই দুর্গমঞ্চলে থেকে যায়। পূর্বের মানুষজনের কোথা থেকে জানা যায় সেই সৈন্যদের উত্তরসূরীরা এখানে থেকে যায় এবং এরাই মালানার আদি বাসিন্দা। এই ঘটনার প্রমান স্বর এই এলাকার মালানা গ্রামের এক প্রাচীন মন্দিরে আলেকজান্ডারের সময়কার একটি তলোয়ার আজও সংরক্ষিত আছে। তাই এই গ্রামের বাসিন্দারা আজও দাবি করে তারা সম্রাট আলেকজান্ডারের সেনাবাহিনীর বংশধর এবং সেই উত্তরসূরী আজও তারা মেনে চলেছে।

Malana : সামাজিক নিয়ম কানুন এক ভিন্নজগৎ প্রকাশ করে
কানাশি নামে একটি ভাষা আছে যে ভাষাটি ভারতবর্ষের কোথাও প্রচলিত নেই কিন্তু এই ভাষাটিতে মালানা গ্রামটির অধিবাসীরা আজও কথা বলে। এই ভাষা এই গ্রামের বাইরে কোথাও ব্যবহার করা হয় না এবং এই ভাষায় কথা বলা এবং শেখার অনুমতি নেই। এই গ্রামের ভাষা এবং সংস্কৃতি এতটাই কঠোর ভাবে রক্ষা করেন যে বহিরাগত ওরা এই ভাষা কথা বলতে পারেন না। এমনকি এও জানা যায় যে বহিরাগতরা এই গ্রামের কাউকে শারীরিক স্পর্শ পর্যন্ত করতে দেয় না। বাইরের কেউ যদি এই গ্রামে প্রবেশ করে কোন কারনে ভুলবশত মন্দিরে খেয়ে ফেললে তার জরিমানা করা হয়।
প্রাচীন কাল থেকে আজ ও তারা তাদেরই গ্রামের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বজায় রেখেছে। এই গ্রামে বিবাহ শুধুমাত্র তাদের গ্রামের ছেলেমেয়েদের মধ্যেই হয়ে থাকে, বাইরের কারোর সাথে কোন পুরুষ বা মহিলা গ্রামের বাইরের কোন পুরুষ বা মহিলার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় না। এই ভাবেই তারা তাদের গ্রামের রক্তের পরিচয় আজ অব্দি অক্ষুন্ন রেখেছে।
Malana : বিশ্বের প্রাচীন গণতন্ত্রের দাবিদার
হিমাচলের পৌরাণিক ঋষি জামুল দেবতার আদেশে পরিচালিত এবং তার প্রয়োগ হয় এই গ্রামে শাসন ব্যবস্থা। এই গ্রামের শাসন ব্যবস্থাটিকে বলা হয় বিশ্বের প্রাচীনতম গণতান্ত্রিক গ্রাম। এটি দাবি করে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা। গ্রামের শাসন ব্যবস্থায় রয়েছে ১১ সদস্যের পরিষদ এই পরিষদ সমস্ত কিছুর সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। এখানে ভারতবর্ষের গণতান্ত্রিক আইন বা পুলিশের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত আইন ব্যবস্থা কার্যকর হয় না। আইন ও বিচার সবকিছুই ঠিক করে গ্রামের পরিষদ। এই গ্রামে কোন সমস্যা হলে পুলিশ প্রবেশ করতে পারে কিন্তু গ্রামবাসীর বিষয়ে আইনগত কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনা।
১৯৯৪ ও ১৯৯৬ সালে মালানা গ্রামের ক্রিম কে সেরা মারিজুয়ানা নামে খ্যাত করেছে। এই ক্রিমটি তৈরি হয় পাহাড়ি অঞ্চলের জন্মানো গাঁজা গাছ থেকে। এই মাওলানা ক্রিম পৃথিবীজুড়ে খ্যাতি লাভ করেছে এটি এত উন্নত মানের ক্রিম যে বিশ্বের কোথাও এরকম ক্রিম প্রস্তুত হয় না। হাই টাইমস ম্যাগাজিন এ প্রকাশিত একটি রিপোর্ট থেকে এটি জানা যায়। তবে বর্তমানে ভারত সরকারের প্রশাসনের মাধ্যমে এই গাজা চাষ বন্ধ করা হয়েছে এবং তার জন্য মাঝে মাঝে বিভিন্ন অভিযান চালানো হয়। তবে এই অভিযান এই অঞ্চলের উচ্চতা এবং দুর্গম পথ এর পথে ব্রাদার সৃষ্টি করেছে। এখানকার এই উন্নত মানের চরস উৎপাদন এই গ্রামের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।
Malana : পর্যটন ও প্রকৃতি
আপনি যদি মাওলানা গ্রামে প্রবেশ করতে যান তবে আপনাকে অনেক কষ্ট করে এখানে পৌঁছতে হবে কারণ এখানে ট্রেন বা বাসে করে যাওয়া যায় না। এই গ্রামটি কুল্লু থেকে প্রায় ৪৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই গ্রামে যেতে গেলে শেষ তিন ঘন্টা আপনাকে কঠিন ট্রেক করে। এই গ্রামের সৌন্দর্য ও রহস্য পর্যটককে খুব আকর্ষিত করে যার ফলে সবাই এই গ্রামে প্রবেশ করতে চায় এবং সৌন্দর্য উপভোগ করতে চায়। তবে এখানে যাওয়ার আগে আপনাকে বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে কারণ এই গ্রামের কঠোর নিয়ম কানুন ও বিচ্ছিন্ন মানসিকতার জন্য। এখানে পর্যটকদের ছবি তোলার অনুমতি দেওয়া হয় কিন্তু কোন ভিডিও করার অনুমতি দেওয়া হয় না। এই গ্রামের বাসিন্দারা বাইরের মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখাটা পছন্দ করেন না।
তবে আশ্চর্যের বিষয় হল করোনা মহামারীর সময় এই গ্রাম সম্পূর্ণ সংক্রমণ মুক্ত ছিল। তারা বিচ্ছিন্ন অবস্থান এবং বাইরের লোকজনের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করার ফলে তাদের এই সংক্রমণ হয় না।
মালানা ভারতবর্ষের একটি গ্রাম নয় এটি একটি গণতান্ত্রিক সভ্যতা। এখানকার ঐতিহ্য সমাজ ব্যবস্থা ভাষা ধর্মীয় ব্যবস্থা অর্থনীতি ইতিহাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মেলবন্ধন একটি আলাদা রূপরেখা তৈরি করেছে। আধুনিক ভারতের কোন ছাপ এই গ্রামে আজ অব্দি পড়েন এবং এই গ্রামের অধিবাসীরা আজও তারা এই ঐতিহ্য বজায় রেখে চলেছেন। পৃথিবীর বুকে এটি একটি আলাদা সভ্যতা। আমরা চাই এই সভ্যতা যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকুক।